বছর শেষ হতে আর কয়টা দিন বাকি। এদিকে, বলিউডে শাহরুখের ডাঙ্কি আর অন্যদিকে, প্রভাসের সালার এই দুই হিন্দি ছবির মাঝখানে দাঁড়িয়ে দেবের “প্রধান” আর মিঠুনের “কাবুলিওয়ালা” । কেমন ব্যবসা করছে বাংলার বাজারে দুটি সিনেমা?
“প্রধান” আর “কাবুলিওয়ালা”
মিনিকে ঘিরে রহমত খানের ভালোবাসার গল্প রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাবুলিওয়ালা। মন কেড়েছে বাঙালির। এমনটা খুব কমই দেখা যায়, যেখানে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে জিনিস বিক্রি করতে আসা লোকটিকে সকলকেই ‘ছেলেধরা’ তকমা দেয়। সেখানে এমন ধর্ম-বর্ণের উপরে গিয়ে ভালোবাসা দিতে পারে কে?
আবার অন্য দিকে যাঁর সিনেমা দেখার জন্য সবসময়ই আগ্রহ থাকে ছোট থেকে বড়ো সকলেই। এবারে একেবারে পুলিশ অফিসারের চরিত্রে দেখা মিলল সেই প্রধানের মুখ দেবকে। যে সিনেমা বক্স অফিস রেকর্ডও বেশ ভালোই বলা চলে। তবে প্রশ্ন অন্য জায়গায়। যেখানে শাহরুখ ভক্তেরা ডাঙ্কি দেখতে ভিড় করছে সিনেমা হলে, যখন অকশনে ভরা সালারে মজে প্রভাস ভক্তেরা, তখন বাংলা সিনেমার টিকিট ঠিক কতটা বিক্রি হচ্ছে?
টিকিট বুকং অ্যাপ BookMyShow নজর রাখলে স্পষ্ট হবে সেই ছবি টা। শেষ ২৪ ঘণ্টার হিসেব যদি দেখা হয় তবে কাবুলিওয়ালার আর প্রধানের টিকিট বিক্রি হয়েছে একে অন্যের থেকে খুব সামান্যই প্রার্থক্য রয়েছে। তবে তুলনামূলক বিচারে খানিক টা এগিয়ে প্রধান। একটি বিষয় স্পষ্ট ডাঙ্কি বা সালারের মতো ছবির পাশাপাশিও যে এমনভাবে বড় অঙ্কের টিকিট বাংলা সিনেমার বিক্রি হচ্ছে, এটাও খুব কম নয়। সপ্তাহান্তের পরে বড়দিনেও যে সেই আয়ের ধারা বজায় থাকলো, তা একদমই স্পষ্ট।
প্রধান মুভি
‘প্রধান’ ছবিতে পুলিশ অফিসারের চরিত্রে রয়েছেন দেব। চরিত্রের নাম দীপক প্রধান। দেবর এই ছবিতে রয়েছেন তার সঙ্গে এক ঝাঁক তারকা। দেবের বিপরীতে আছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সৌমিতৃষা কুন্ডু। সোহম চক্রবর্তী, অনির্বাণ চক্রবর্তী রয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। এছাড়াও রয়েছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, মমতা শঙ্কর, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সোহিনী সেনগুপ্ত প্রমুখ। এই এক ঝাঁক তারকাদের নিয়ে শুটিং হইয়াছে উত্তরবঙ্গের অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায়।
‘প্রধান’ ছবির প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী অবশ্য খুব একটা চিন্তিত নন এই ছবি নিয়ে। ছবির প্রিমিয়ার এ এসে বললেন, ‘‘টেনশন হচ্ছে না একদম ই তবে প্রজাপতির মতোই প্রধান ও সুপারহিট ছবি হবে।’’ ওনার মতে, ছবির আউটডোর নয়, বরং বলা যেতে পারে পুরো ছবিটাই তাঁরা উত্তরবঙ্গে শুটিং করেছেন।
‘প্রধান’ ছবির পরিচালক অভিজিৎ সেন বললেন, ‘‘ এর আগে ‘টনিক’-এর সময়েও আমরা পাহাড়ে শুটিং করেছিলাম। সবাইকে নিয়ে মনে হচ্ছে আগামী কয়েকদিন বেশ ভালই কাটবে।’’ তবে একই সঙ্গে পরিচালক বললেন গল্পের প্রয়োজনেই এই ছবির প্রেক্ষাপট পাহাড়। অভিজিৎ সেন বললেন, ‘‘আসলে আমার মনে হয়, এই রাজ্যে এত ভাল ভাল লোকেশন রয়েছে যে বাংলার বাইরে গিয়ে শুটিং করার মতো বিশেষ একটা প্রয়োজন হয় না।’ দীর্ঘ দিন পর ‘প্রধান’-এর মাধ্যমেই আবার বাংলা ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন শান্তনু মৈত্র।
কাবুলিওয়ালা মুভি
অন্য দিকে কাবুলিওয়ালা উপন্যাস বা গল্প যখন ছবির মাধ্যমে পর্দায় ফুটে ওঠে, তখন সাসপেন্সের থেকেও কেমন হয়েছে, বা কী কী পরিবর্তন এসেছে সেটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়। তাই এক্ষেত্রে পরিচালকের কাজ আরও কঠিন হয়ে ওঠে গল্পকে ছবিতে ফুটিয়ে তুলতে! তার উপর আবার কাবুলিওয়ালা। যা এর আগেও পর্দায় বহুবার দেখেছেন দর্শক। সুদূর আফগানিস্তান থেকে ছোট্ট রাজিয়াকে ছেড়ে পেটের টানে কলকাতায় এলেন রহমত খান মানে মিঠুন চক্রবর্তী যার লক্ষ্য একটাই বাদাম, আখরোট, শীতপোশাক বিক্রির মাঝে একমুঠো স্বপ্ন কিনে আবারও আফগানিস্তানে ফেরা। এটাই যে তার একমাত্র পুঁজি, সেখানে তার ছোট্ট মেয়েটি সেখানে অপেক্ষায় রয়েছে যে।
মিনি কে নিয়ে এত বড়ো ছবি, সেই মেয়ের কথায় কোনও ফাঁকফোকর নেই। গোটা পর্দাজুড়ে দাপিয়ে বেড়াল। তার চোখই বলে দিচ্ছিল এ গল্প তো তাদের মতো মিনিদের, যারা শুধু বন্ধুত্ব বোঝে, ধর্ম-বর্ণ-বয়স কোনোটাই বোঝা না সে। মিনির বাবার চরিত্রে আবির চট্টোপাধ্যায় অন্যদিকে, মায়ের চরিত্রে সোহিনী সরকার। যেমনটা হয় আর কী! ধর্মের গণ্ডিতে জীবনের বিচার করেন উনি ছোট্ট মিনিকে নিয়ে অতি সাবধানী। সংক্ষিপ্ত চরিত্রেও বিশেষত্ব রয়েছে।
সব মিলিয়ে হিন্দি আর দক্ষিণ সিনেমা কে সরিয়ে বাঙ্গালীর এই ছবি দুটি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাক্স অফিস এ । তবে কেক-পেস্ট্রি আর সোয়েটারের মতো প্রতি বছর পর্দায় এমন কাবুলিওয়ালা আর প্রধান তো আসে না। তাই এবছর শীতের একটা দুপুর না হয় কাটানোই যাক মিনি-কাবুলিওয়ালার সঙ্গে না হয় প্রধান এর সঙ্গে।