কাঁচা ছোলা একটি স্বাস্থ্যকর, সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং উপকারী খাবার। যে খাবারটি রাতে ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খেলে ভীষন উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা ছোলা অনেক সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর ফসল হওয়ার কারণে এটি একটি জনপ্রিয় খাবার হিসেবে পরিচিত। সকালে কাঁচা ছোলা খেলে ভীষন উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা ছোলা Cicer arietinum নামেও পরিচিত। ১০০ গ্রাম কাঁচা ছোলা প্রায় ৮-৯ গ্রাম প্রোটিন সরবরাহ করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ১০০ গ্রাম কাঁচা ছোলা তে আছে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১০ মিলিগ্রাম লৌহ ও ভিটামিন A ১৯০ মাইক্রোগ্রাম থাকে। এছাড়া আছে ভিটামিন বি-১, বি-২, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম। ডায়াবেটিকদের জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এছাড়াও প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা ছোলা প্রায় ৮-৯ গ্রাম প্রোটিন সরবরাহ করে, যা পৌষ্টিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মুখ্যভাবে প্রোটিনের উত্তম উৎপাদন করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কাঁচা ছোলা সকালে খালি পেটে খাওয়ার নিয়মঃ
কাঁচা ছোলার খাওয়ার সঠিক নিয়ম হচ্ছে খালি পেটে সকালে খাওয়া। রাতে এক মুঠো কাঁচা ছোলা বা ২৫-৩০ গ্রাম পরিমাণ ছোলা ভালো করে পরিষ্কার জলে ধুয়ে ভিজিয়ে রাখবেন। সকালে সেই ভিজিয়ে রাখা কাঁচা ছোলা খাবেন। এতে এনার্জি পাবেন সারাদিনের জন্য । শুধু কাঁচা ছোলা খেতে বেশী ভালো না লাগলে হালকা নুন, গুড়, অথবা চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও কাঁচা ছোলা, ভেজানো ছোলার সাথে কাঁচা আদা বা ভিনেগার মিশিয়ে খেতে পারেন। এভাবে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।এই ভাবে কাঁচা ছোলা খাওয়ার নিয়ম মেনে চললে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা :
রান্না করা ছোলার চাইতে কাঁচা ছোলায় (raw chickpeas) ভিটামিন বি-এর পরিমাণ বেশী থাকে, যা মস্তিষ্কের সমস্যা, হৃদয়ন্ত্রের দুর্বলতা, এবং বেরিবেরি রোগ প্রতিরোধ করে। ভেজানো ছোলায় বিদ্যমান অধিক ভিটামিন বি মেরুদন্ডের ব্যথা ও স্নায়ুর দুর্বলতা কমায়৷ কাঁচা ছোলায় ক্যালরির পরিমাণ মাঝারি থাকে, যা দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং শরীরে ক্যালরির চাহিদা পূরণ করে। আবার এর ফাইবার ও উচ্চ মাত্রার প্রোটিন পেটে অনেকক্ষণ থাকে। তাই ঘন ঘন খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ছোলার শর্করায় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকায় তা ডায়বেটিক রোগীদের জন্য ভালো। তাই ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন সকালে কাঁচা ছোলা খাওয়া যেতে পারে। কাঁচা ছোলা না ভিজিয়ে সরাসরি ভেজে খেলে শ্বাসনালীতে জমে থাকা কফ ও কাশি নিরাময় হয়। কাঁচা ছোলায় বিদ্যমান আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করে। আবার এর ফাইবার অন্ত্রে জেল তৈরি করে এবং ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়। ফলে পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে। ছোলাপ্রোটিনের বেশ ভালো একটি উৎস। নিরামিষভোজীদের শরীরে মোট প্রোটিনের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ পূরণ করে কাঁচা ছোলা। রান্না বা সিদ্ধ করা ছোলার চাইতে কাঁচা ছোলার পুষ্টিগুণ বেশী থাকে বিধায় তা হৃদপিন্ড, হাড়, ত্বক, চুল, মাংসপেশী, এবং রক্তের জন্য উপকারী। কাঁচা ছোলা জ্বর ও কৃমি সারিয়ে তুলতে পারে। ছোলার রাসায়নিক উপাদান বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার ও টিউমারের বৃদ্ধি রোধে সহায়তা করে। নিয়মিত কাঁচা ছোলা খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। পাশাপাশি ছোলা দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। কাঁচা ছোলায় বিদ্যমান পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় বা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। সেই সাথে দেহে রক্ত চলাচল বাড়ে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ছোলার আইসোফ্লাভন ইস্কেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর ধমনীর কর্মক্ষমতা বাড়ায়।ছোলার ফলিক অ্যাসিড গর্ভপাতের ঝুঁকি কমায়, হাইপারটেনশন রোধ করে, এবং রক্তে অ্যালার্জির পরিমাণ কমায়। তাই কমবয়সী নারীদের নিয়মিত কাঁচা ছোলা খাওয়া উচিত।
কাঁচা ছোলা খাওয়ার অপকারিতা :
সাধারণত দুই প্রকারের ছোলা পাওয়া যায়: দেশী ছোলা ও কাবুলী ছোলা। দেশী ছোলা আকারে ছোট, একটু কালচে রংয়ের এবং অপেক্ষাকৃত শক্ত। কাবুলী ছোলা একটু বড় আকারের, উজ্জ্বলতর রং এবং দেশী ছোলার চেয়ে নরম। তবে ভেজানো কাঁচা ছোলা খাওয়ার সময়ে কিছু সতর্কতা পালন করতে হবে। যদি আপনি কাঁচা ছোলা খান খালি পেটে, তাহলে এর পরে আচার খাবেন না। মিষ্টি আচার হলেও না। ভিনেগার দেয়া থাকে আচারে । তাই কাঁচা ছোলার (raw chickpeas) পরে আচার খেলে ভিনেগার দেহে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। সেই সাথে হতে পারে অম্বলের সমস্যা, গলা ও বুকে জ্বালা, এমনকি হার্ট অ্যাটাকও।
কাঁচা ছোলার পুষ্টি উপাদান :
কাঁচা ছোলা একটি পৌষ্টিক এবং স্বাস্থ্যকর ফসল, যা বিভিন্ন উপকারিতা প্রদান করে। এটি প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, এবং খনিজের উচ্চ উৎপাদন করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা ছোলা একটি সুস্বাদু খাবার এবং এর সাথে অনেক প্রকারের খাবার তৈরি করা যায়, যা এটির জনপ্রিয়তা বাড়ায়। তাই, কাঁচা ছোলা আমাদের স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি প্রয়োজনীয় খাবার এবং সুস্বাদু সম্প্রদায়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ১০০ গ্রাম ছোলায় আছে ১৭ গ্রাম প্রোটিন, ৬৪ গ্রাম শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং ৫ গ্রাম ফ্যাট আছে কাঁচা ছোলায়। ছোলার শর্করা কম তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ছোলা খাওয়া ভাল। কাঁচা ছোলায় ক্যালসিয়াম আছে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম প্রতি ১০০ গ্রাম এ, লৌহ ১০ মিলিগ্রাম, ও ভিটামিন এ ১৯০ মাইক্রোগ্রাম। এছাড়া আছে ভিটামিন বি-১, বি-২, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম। এর সবই শরীরের উপকারে আসে। তাই প্রত্যেকদিন কাঁচা ছোলা খাওয়া প্রত্যেক মানুষের খুবই দরকার ।
কাঁচা ছোলা খেলে কি ওজন বাড়ে :
কাঁচা ছোলা দ্বিতীয় প্রকারের কাঁচা শাকসবজি, যা উচ্চ ফাইবারের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এটি সাধারণভাবে শোষণ এবং মুখ্যভাবে পাচনের সময় সাহায্য করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ছোলা খেলে ওজন বাড়ে না নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কাঁচা ছোলা দিয়ে তৈরি কিছু স্বাদেশী রেসিপির উদাহরণ নিম্নে দেওয়া হলো:
1. কাঁচা ছোলাকে ধুয়ে পরিষ্কৃত করুন। কাঁচা ছোলাকে একটি পাত্রে রেখে সরিষার তেল, লেবুর রস, নমক, কালো মরিচ গুঁড়ি দিয়ে ভাল মিশান। সব উপকরণ মেখে দিন এবং সালাদ তৈরি হয়ে গেল। এটি ঠান্ডা পরিবেশন করুন। আপনি এই রেসিপি অনুসরণ করে একটি স্বাদিষ্ট ও স্বাস্থ্যকর পরিষ্কার খাবার তৈরি করতে পারেন।
2. প্রথমে ছোলাটাকে প্রেসার কুকারে সেদ্ধ করে নিতে হবে। সেদ্ধ ছোলাটাকে কড়াইয়ে সাদাতেল গরম করে একটু ভেজে নিতে হবে।
এবার একটা মিক্সিং পাএে সেদ্ধ ছোলা,পেঁয়াজ কুঁচি, টমেটো কুঁচি, শসা কুঁচি, লঙ্কা কুঁচি, বীট নুন,লবণ,লেবুর রস,সেদ্ধ করা আলুর টুকরো,চাট মশলা দিয়ে খুব ভালো করে মেশাতে হবে। এরপর ধনেপাতা কুঁচি আর ঝুড়ি ভাজা ওপর দিয়ে ছড়িয়ে পরিবেশন করুন চটপটা “ছোলার চাট”।
কাঁচা ছোলা ও বাদাম খাওয়ার উপকারিতা:
কাঁচা ছোলার মতো বাদামও প্রোটিন সমৃদ্ধ। ফাইবার ও ফ্যাট দুই আছে এতে। তবে এই ফ্যাট শরীরের জন্য উপকারী। ভেজানো বাদামেও প্রচুর ভিটামিন আছে । সকালে উঠে খেতে পারেন ভেজানো বাদাম যাঁদের চুল পড়ার সমস্যা আছে বা যাঁদের ত্বক খুবই শুষ্ক তাঁরা, উপকার মিলবে।২৫-৩০ গ্রাম ছোলাতে আছে ১০০ গ্রাম ক্যালোরি। শুধু ছোলা নয় বাদামেও থাকে সমান ক্যালোরি। ফলে অতিরিক্ত ছোল-বাদাম আপনার ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
কাঁচা ছোলা খাওয়ার পরিমান:
কাঁচা ছোলার গুণাগুণ কারুরই অজানা নয়। উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার কাঁচা ছোলা। সকালটা অনেকেরই শুরু হয় রাতের ভেজানো কাঁচা ছোলা খেয়ে। আপনি এক মুঠো মানে 25-30 গ্রাম ছোলা খাবেন প্রতিদিন। এর থেকে বেশী কাঁচা ছোলা খাওয়া ঠিক নয় । একজন সুস্থ মানুষের জন্য 30 গ্রাম পর্যন্ত ছোলা খাওয়াই যথেষ্ট।
কাঁচা ছোলা খেলে কি ওজন বাড়ে?
কমাতে চাইছেন ওজন ? সেক্ষেত্রে অঙ্কুরিত কাঁচা ছোলা রাখুন ডায়েটে। টিফিনে স্ন্যাক্স হিসাবে সন্ধ্যাবেলার অঙ্কুরিত ছোলা, লেবু, লঙ্কা-নুন, মেখে খেতে পারেন। গুণেও ভাল স্বাদেও ভাল।
এছাড়াও , কাঁচা ছোলা খেলে শরীরে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিকের চাহিদা পূরণ হয়। কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে, অ্যান্টিবায়োটিক যে কোনো অসুখের জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে আমিষ মানুষকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান বানায়। কাঁচা ছোলা রোগ প্রতিরোধ করে। কাঁচা ছোলায় খাদ্য আঁশ আছে, এ আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য সারায়। শরীরের অপ্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয় কাঁচা ছোলা। গবেষকরা তাদের গবেষণায় প্রমাণ করেছেন নারীরা কোলন ক্যানসার এবং রেক্টাল ক্যান্সার এর ঝুঁকি থেকে নিজিদেরকে মুক্ত রাখতে পারেন যে বেশি পরিমাণ ফলিক এসিড খাবারের সাথে গ্রহণের মাধ্যমে। ফলিক এসিড রক্তের অ্যালার্জির পরিমাণ কমিয়ে , এ্যজমার প্রকোপও কমিয়ে দেয়। আর তা্ই নিয়মিত কাঁচা ছোলা খান এবং সুস্হ থাকুন।